Sunday, July 02, 2006

বাউল


বাউল শুধু বাউল হয় না ৷ কতই পাখি উড়ে বেড়ায় সহজ জ্যামিতিতে ৷ মাছেদের সেই খেলা আঁকতে পারে ক'জনা ? আকাশে মেঘ উড়ে গেল , হাওয়ায় এমনি করে মাথা দোলালো কচি সবুজ ধানের পাতা, অমন বাউল হতে পারে ক'জনা ?


সুরের খেলায় হার মানে হারমনিয়াম, এমন ওঠাপড়া, সে তো রোদ্দুরেই খেলতে পারে ৷ জানালার পর্দা হঠাত উড়ে যায়, বোরখা সরলেও সরতে পারে কিন্তু শুকনো পাতা ঝরে না ৷ আসলে বহুবছর ঝরে যায় উত্তরার মত শুকনো পাতা টুপটাপ ঝরতে ৷ মরুভূমি থেকে কটা বালুকনা বা সরে হাজার বছরে ৷ শুধু বালি আর বালি ! তোমার ছিল মেঘ , সবুজ, নীল, সব ঘন রঙা শাড়ি ৷ শূণ্য টেবিলের চারদিকে একা বসে থাকা, ঘড়ির কাঁটা ঘোরার মত চারদিকে প্রখর অস্তিত্ত্ব ৷ মেঘে মেঘে খেলা হয়, জলে জলে বেলা ৷ উঠান জুড়ে তারে মেলে দেওয়া কাপড় জামা একসময় শুকিয়ে আসে, পাখি ঘরে ফেরে ঢেউ ফের ওল্টায় ৷ মাটির পরে বালি আসে, বালির পরে মাটি ৷ শাক বারে বারে ধুয়ে বালি নিষ্কশিত করে যতটুকু আনন্দ পাওয়া যায়, আরও হরিদ্রাভ গভীর কিছু , চাই তো বটে কিন্তু কোথায় ?


সেই প্রখর জলের মধ্যে এক দ্বীপ, বড় বড় সবুজ পাতায় ঘেরা, আর কিছু দেখা যায় না সেখানে ৷ তীব্র পাখির আওয়াজ ৷ কত মাছ আলাপ করল না পড়শীর সাথে, ঘুরপাক খেল শুধু, ক্যালেন্ডারের তারিখের মত উল্টে গেল ৷ গোয়ালন্দ ছেড়ে আসা ষ্টিমারের উপর ঘুরে ঘুরে গান গায় সেই পাগল বাউল , যে জানে না এ ষ্টিমার আরিচা ভিন্ন অন্য কোথাও যাবে না, অথচ সেই অন্য ঘাটেই তার সন্ধান ৷ গেলই বা উড়ে কিছু পাখি, মেঘ যেমন তেমন ৷

নয়ডা ৷ উত্তরপ্রদেশ ৩৷২৷২০০৪

খাঁচা


চারপাশে কতগুলো খাঁচা নিয়ে মহিলা বসে আছেন উত্সুকচিত্তে ৷ খাঁচাগুলো থরে থরে সাজানো অনেকটা ঘাসের মতন ৷ চারপাশে এত চিত্কার আকাশ চোখেই পড়ে না ৷

বেশ কিছুদিন আগে সবুজ রঙ করা হয়েছিল খাঁচাগুলোতে, কালান্তে সেটা বোঝা গেলেও খুব বেশি রঙ আর বেঁচে নেই ৷

আসলে বেশিরভাগ খাঁচার ভেতরই টিয়া, খাঁচাগুলো তাতেই কিঞ্চিত সবুজ হয়ে থাকবে ৷ কোথাও মস্ত রুটির ঢাকনার তলায় ফুটফুটে দুটো সাদা ইদুর ৷ কয়েকটা খরগোশ ৷ খরগোশের বাচ্চারা ঠান্ডায় একসাথে চুপটি করে বসে ৷ কাঁপছে, ক্রমাগত উত্তেজনায় যেমন কাঁপে উরু ৷


চারিদিকে থরে থরে সাজানো খাঁচা ৷ আসলে সেগুলো লোহার কিছু তার , সোজা, বাঁকা বা এমনটাই রুলটানা খাতা যেন ; অক্ষরের যেমন নিয়তি তাতে আটকা পড়া, কিংবা সবুজ গাছ কিছুটা নিরাপদ মনে করে এমনি বেষ্টনির আড়ালে ৷ কতগুলো লোহার লাইন, সোজা কিংবা বাঁকা - তা বই তো আর কিছু নয় ৷ খরগোশেরা নিরাপদ মনে করে না, ঠিকমত জানেও না তারা খাঁচার বাইরে আছে না ভিতরে ৷ সেই মহিলাও একরাশ হৈ হট্টগোলের মধ্যে চারপাশের চারপাশের খাঁচার দূর্গ ঝুলিয়ে বসে আছে স্থির ৷এমন মহিলার মুখ স্পষ্ট করে মনে পড়ে না, তার শাড়ির রঙ ও নয় ৷ তবু খাঁচাগুলোর রঙ সবুজ বলে মনে হয় ৷


সেই খরগোশগুলোর কথা মনে পড়ে ৷ কুকুর শিয়ালের তাড়া খেয়ে ছুটেছিল দিকভ্রান্তের মত ৷ জন্গলে এমন প্রাণী কতই তো মরে ৷ এ ওকে না মারলে তো ইশেসিষ্টেমের দোহাই ৷ এই রকম দু'চারটে খরগোশ ব্যস্ত শহরের খাঁচায় ভরে না রাখলে কথামালা পড়া শিশুরা , আমার মত, জানতেও পারতো না খাঁচা জিনিসটা খুব একটা জরুরি নয় ৷ সবাই খাঁচায় থাকতে বেশ ভালো বাসে ৷ খরগোশের চোখে দেখলে একটা খাঁচার মধ্যে এতগুলো মানুষ, ব্যস্ত শহর, মস্ত বাজার, হাঁটা-চলা, হট্টগোল, ভুলে যাওয়া আকাশ ৷ খাঁচার বাইরে গুটিসুটি মারে থরথর করে কাঁপা খরগোশের বাচ্চা ৷ কেবল এবং নিরাপদ ৷


নয়ডা, উত্তরপ্রদেশ ১৷২৷২০০৪